এস,এম,হাবিবুল হাসান :
সাতক্ষীরার তালায় বিদেশী ফল কাজুবাদাম চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নতুন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসাবে । কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা উপ-পরিচালক বলেন, উষ্ণ মন্ডলীয় ফল কাজুবাদাম মূলত দেশের পাহাড়ী অঞ্চল খাগড়াছড়ির ,নারানখাইয়া,পানখাইয়াপাড়া,কমলছড়ি জামতলী,ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এলাকায় কিছু টা চাষাবাদ চোখে পড়ে। তবে, সাতক্ষীরা জেলাব্যাপি ব্যাপকভাবে কাজুবাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
মো. রফিকুল ইসলাম সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার শিবপুর গ্রামের মরহুম কেরামত আলী খাঁ’র ছেলে। রফিকুল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্য।তিনি সফল উদ্যােক্তা হিসাবে বিভিন্ন ফলজের নতুন কিছুর উৎভবনের চেষ্টায় অব্যহত আছেন। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল কে হটিয়ে সাতক্ষীরা তালায় ব্যাপকভাবে কাজুবাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন এই কৃষক।
সাবেক সেনা সদস্য মো: রফিকুল ইসলাম প্রথমে তার মিষ্টি পানির মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধের উপর রোপন করেন পাঁচটি কাজুবাদাম গাছ। চাষ করার পর ফলন ধরেছে দুই বছর। কাজু বাদাম কষ্ট সহিষ্ণু ও খরা প্রতিরোধী। প্রখর সূর্যালোক পছন্দ করে এবং ছায়াতে তেমন বৃদ্ধি পায়না। তাপমাত্রা অত্যধিক হলে কচি ফল ঝরে যায়। অধিক বৃষ্টিপাত এবং মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ফলন কমিয়ে দেয়। সব কিছু উপেক্ষা করে কাজু বাদাম চাষে সফলতার মুখ দেখছেন এই সাবেক সেনা সদস্য।
প্রকাশ, কাজু বাদাম একটি নাট বা বাদাম জাতীয় ফল। কাজু বাদাম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানাকার্ডিয়াম অক্সিডেনটেল। এটি সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ। বীজ থেকেও চারা তৈরি করা হয়। বেলে দোআশঁ মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে ভাল জন্মে। বৃক্ষ জাতীয় ফসলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান তৃতীয়। এর বীজ থেকে পাওয়া বাদাম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও মূল্যবান। বাদামের উপরের অংশের ফল থেকে জুস, ভিনিগার এবং অ্যালকোহল তৈরি করা যায়।
কাজুবাদাম দামে বেশচড়া।দেশে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাজু বাদাম বিক্রি হয় ৮শত থেকে ১ হাজার টাকায়। কাজু বাদাম সাধারণত খাগড়াছড়ির, নারানখাইয়া, পানখাইয়াপাড়া, কমলছড়ি জামতলী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এলাকায় কিছুটা চোখে পড়ে। এসব এলাকায় কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।
অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্য মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর আগে কাজুবাদামের চাষ করেছেন। গতবছর ও এবছর গাছে কাজুবাদাম ধরেছে। কাজু বাদামের বীজ গুলো চারা দেওয়ার জন্য রেখেছেন। বাড়িতে বীজ রোপন করে নতুন চারা ও গজিয়েছে। তাছাড়া গাছে কলম পদ্ধতিতে গাছের বংশবিস্তরের চেষ্টা করছেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজুবাদাম চাষের গবেষণা ও পিএইসডি অধ্যায়নরত কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানাকে দেখে এই কাজুবাদাম চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।এই কাজুবাদাম চাষের জন্য তার কাছ থেকে কিছু বীজ এনে বাড়িতে চারা উৎপাদন করেন।স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে কাজু বাদাম অতুলনীয়। বিশ্বের কাজু বাদামের চাহিদার ৫২ শতাংশ ভিয়েতনাম এবং ২২ শতাংশ ভারত সরবরাহ করে। বাংলাদেশে যদি অধিক পরিমানে কাজুর চাষ করা যায় এবং তা প্রস্তুত করে বাইরের দেশে রপ্তানী করা যায় তাহলে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করা সম্ভব।
তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, কাজুবাদাম একটি বিদেশী ফল। বাংলাদেশে পাহাড়ী অঞ্চলে কিছু চাষ হয়ে থাকে বলে জানি। তবে দেশের উপকূলীয় এলাকা সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সদরে এমন একটি বৈদেশিক ফলের উৎপদন হয়েছে। কাজুবাদাম চাষে পরিক্ষা মূলক সফলতা এসেছে তালা উপজেলা কৃষি অফিস ও জেলা কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট সাতক্ষীরার সফলতার ছোঁয়া লেগেছে। এটা তালা উপজেলার একটি গর্ব সাতক্ষীরা জেলা সহ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবৃদ হাজিরা খাতুন জানান, কাজুবাদাম একটি বিদেশী ফল। দেশে পাহাড়ী অঞ্চলে এই ফলের চাষ হয়ে থাকে। তালা উপজেলায় কাজুবাদামের চাষ হয়েছেন অফিসের পক্ষ থেকে প্রদর্শনী প্লট করেছেন। তালা উপজেলায় কাজুবাদাম চাষের বিস্তার ঘটার সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন তালা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম জানান, কাজুবাদাম সাধারণত পাহাড়ী অঞ্চলে চাষ হয়।সাতক্ষীরা জেলায় তেমন চাষের সম্ভাবনা দেখছেন না।তবে তালায় দেখেছেন মৎস্য ঘেরের বেড়ীবাঁধের উপর কাজুবাদাম চাষ। সাতক্ষীরা জেলায় এই প্রথম চাষ বলে তিনি মনে করেন।তালা উপজেলাসহ সাতক্ষীরা জেলা সমূহে ব্যাপকভাবে কাজুবাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা বলে মনে করেন।