এস,এম,হাবিবুল হাসান :
সাতক্ষীরার তালায় ১১টি ইউনিয়ন জুড়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি আর শেষ মুহুত্বের প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে । ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ।
চায়ের দোকানসহ সকল জায়গাতেই চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা আর জল্পনা-কল্পনা। মাইকিং ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়াতেও চালাচ্ছে অনেক প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারনা। প্রার্থীরা স্থানীয় ভোটারদের সাথে গণসংযোগ এবং হ্যান্ডবিল বিলি ছাড়াও এলাকার রাস্তা-ঘাট, ড্রেনসহ যাবতীয় উন্নয়ন ছাড়াও ভোটারদের দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
তালা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৩, সাধারণ সদস্য পদে ৪৫২ এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তালা সদর, খলিলনগর, তেঁতুলিয়া এই ৩টি ইউনিয়নে ৩১ টি ভোট কেন্দ্রে ১৯২ টি কক্ষে এবার প্রথম ইলেকটোরাল (ইভিএম মেশিনে) ভোট দেবেন ভোটাররা ।
তালা উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নে ২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৪ জন ভোটার রয়েছে। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭০ জন এবং মহিলা ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৪ জন। এর মধ্যে ধানদিয়া ১৭২৩৭ জন, নগরঘাটা ১৫২৫৩ জন, সরুলিয়া ৩০০৫৫ জন, তেঁতুলিয়া ২০৭৫৩জন, তালা সদর ২৬৫৮৩ জন , ইসলামকাটী ১৬৭৩৯ জন, মাগুরা ১৭৩৫৫ জন খলিষখালি ২১০৯৫ জন খেশরা ২২০৬২ জন , জালালপুর ১৯২২১ জন ও খলিলনগর ২৪৪৭১ জন ভোটার সংখ্যা।
সাধারন ভোটাররা জানান, বিগত দিনে যাদের দিয়ে এলাকার উন্নয়ন হয়েছে সুখে -দুখে যাদেরকে পাশে পাওয়া যায় ,আগামীতে যাদের দ্বারা এলাকার উন্নয়ন হবে তাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো ।
খলিলনগর ইউনিয়নের নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু জানান, খলিলনগরে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। ইউনিয়ন বাসী যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছে তা পুরণ করতে পারিনি বর্তমান চেয়ারম্যান। তাই এবার নৌকাকে ভোট দিয়ে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহবান জানান তিনি।
জালালপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। দুই বার চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছি। জনগণ আবারো আমাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন বলে আমি আশাবাদী। ভোটারদের তিনি আনারস প্রতীকে ভোট দিতে ভোটারদের কাছে অনুরোধ জানান।
তালা সদর ইউনিয়নের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন জানান,তার ইউনিয়নের ব্যাপক উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমি সব সময় কাজ করে যাব। তাই আগামী ২০ সেপ্টেম্বর আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।
তালা সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমানে জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী এস.এম নজরুল ইসলাম জানান, আমি ২০১১-১৬ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান থাকাকালে তালা সদর ইউনিয়নে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছি। ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারী ওয়াল ও গেট নির্মাণ করেছিলাম। দীর্ঘদিনের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতার হাত থেকে তালাকে মুক্ত করেছি।
দুর্ণীতি অনিয়ম বা কোন অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ছাড়াই সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে গরীব-দুস্থরা সেবা পেয়েছেন। সেকারণে আমি মনে করি দলমত নির্বিশেষে তালা ইউনিয়নের মানুষ ভোট দিয়ে লাঙ্গল প্রতিককে জয়যুক্ত করবে। আমি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।
তালা উপজেলার খলিষখালি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাফফর রহমান বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায়উৎসব মুখুর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সর্বাত্মক প্রস্তুতিও রয়েছে। নৌকার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। আমরা চাই সুষ্ঠ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হোক।
তালা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাহুল রায় জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ আনুষঙ্গিক সব ব্যবস্থার করা হবে। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজমুল কবীর জানান, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে। ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি আগেই ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই দফায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। স্থগিতকৃত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে সাতক্ষীরার দুটি উপজেলায় ২১টি ইউনিয়নে ২০ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে তালা উপজেলায় ১১ টি।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে, আইনের ব্যতয় ঘটালে বা চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কোন রকম উস্কানি ও হয়রানিমূলক কাজ করার চেষ্টা করলে সেটির বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।