এস,এম,হাবিবুল হাসান :সাতক্ষীরায় রাতভর প্রবল বৃষ্টি দিনে টিপ টিপ বৃষ্টি উপেক্ষা করে তালা ও কলারোয়া উপজেলার ২১ টি ইউনিয়নের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে শান্তিপূর্ণ ভাবে। বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহন শেষে চলছে গননা। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বিরামহীনভাবে ভোটের মাঠে প্রশাসন ছিল কঠোর অবস্থানে।
রবিবার(১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে সাতক্ষীরায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির শুরু। জনপ্রতিনিধিরা চিন্তিত পোষ্টার ভিজে নষ্ট হওয়া নিয়ে। এমন সময় প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিকরা থাকে কাজের মহাব্যস্ততায়। নতুন করে পোষ্টার অর্ডার নিলে সময় মত ডেলিভারি দিতে পড়তে হয় ঝামেলায়। বর্ষা কাদায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে দোয়া ও ভোট চাইতে যেতে প্রার্থীদের জন্য অনেকটা কষ্টদায়ক হয়ে যায়।
তবে সোমবার(২০ সেপ্টেম্বর) এই বৃষ্টির মাঝে সকাল থেকে প্রতিটি ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। ভোট দিতে আসা সকল ভোটারদের মাথার উপরে ছিল ছাতা। ভোট দিতে নারী-পুরুষের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারাও।
চায়ের দোকান গুলোতে ভোট সংক্রান্ত আলোচনায় পঞ্চমূখ ছিল। শিশু-কিশোররা বিভিন্ন প্রার্থীদের প্রতিক হাতে-গায়ে ঝুলিয়ে ভোট আনন্দে মেতে উঠেছিল। কর্মীদের মাঝে আনন্দ উল্লাস থাকলেও প্রার্থীদের মুখে দুঃচিন্তার ছাপ। কে জিতবে আর কে হারবে? এমন চিন্তা সবারই। ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রিজাইডিং অফিসারের পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে মোতায়ন ছিল পুলিশ ও আনসার সদস্য।

সোমবার সকাল ৮ টা হতে দুটি উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গিয়েছ।যা চলে ভোটগ্রহণ শেষ অবদি বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
তালা উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের ৭৩ টি ভোট কেন্দ্রের ৪০৩টি কক্ষে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং বাকি ৩ টি ইউনিয়নের ৩১ কেন্দ্রের ১৯২ কক্ষে ইভিএম এ ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটাররা বলেন, এবার তালা উপজেলায় ৩টি ইউনিয়নে ইভিএম ম্যাশিনে ভোট হয়েছে। আমরাও ইভিএম ভোট প্রদান করেছি। ইভিএম ভোট দেওয়া সহজ।তালা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে প্রকাশ, ১১টি ইউনিয়নে ৪৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ইউপি সদস্য পদে ৪৫২ ও মহিলা সংরক্ষিত সদস্য ১৩৬ জন নির্বাচন করছেন।
১১ ইউপিতে মোট ভোটার সংখ্যা পুরুষ ১ লক্ষ ১৬হাজার ৪৭০ ও মহিলা ১ লক্ষ ১৪হাজার ৩ শত ৫৪ জন মোট ২লক্ষ ৩০ হাজার ৮২৪ জন ভোটার রয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা রাহুল রায় বলেন, ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তালা উপজেলায় নিরাপত্তার চাঁদর দিয়ে ঢেঁকে দেওয়া হয়েছে।যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে আছেন ম্যাজিষ্ট্রেটসহ পুলিশ, র্যাব, আনসার ব্যাটেলিয়ান, আনসার ভিডিপি, বিজিবির সদস্যরা।কাউকে ছাড়া দেওয়া হবে না। ভোট স্ষ্টু ও নিরপেক্ষ হবে।
ভোট চলাকালে কোথাও কোনো বড়ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। দুপুর ১ টার সময় তালা পাটকেলঘাটার ফুলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারের সরব উপস্থিতি ছিল নজরে পড়ার মত। ফুলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সুধাংশু সরকার জানান. এখন পর্যন্ত ভোটারদের উপস্থিতি মোট ভোটারের অর্ধেকেরও বেশি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতি এমনটি বলে জানালেন তিনি।
পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ম্যাজিট্রেট নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ টিম সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।
অপরদিকে,রাতের আঁধারে নৌকা প্রতিকে সিল মারার অভিযোগে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ইউনিয়নের একটি ভোট কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার প্রথম প্রহরে ইউনিয়নের কেড়াগাছি উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে অবৈদভাবে নৌকা প্রতিকে সিল মারে নৌকা প্রতিকের সমর্থকরা।
বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রাসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেলা নির্বাচন অফিসারকে অবগত করে। জেলা নির্বাচন অফিসার নাজমুল কবির ঘটনাস্থানে এসে ভোট কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।এদিকে,কেড়াগাছি ইউনিয়নে অপরএকটি কেন্দ্রে এক ইউপি সদস্য প্রার্থীসহ এক সাধারণ ভোটারকে মারপিট করে হাত ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে।

সোমবার দুপুরে ইউনিয়নের হঠাৎগঞ্জ ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ভোট কেন্দ্রের বাইরে এ মারপিটের ঘটনা ঘটে। এসময় ইউপি সদস্যপ্রার্থী জামাল হোসেন ও হোসেন আলী নামে এক যুবকের হাত ভেঙ্গে যায়।
কেড়াগাছি ইউনিয়নে ইউপি সদস্য প্রার্থী জামাল হোসেন জানান, আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ও এই নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করছি। তবে সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে ভোটাররা নির্বাচনে আসতে চাইলে স্থানীয় মান্নান, রউফসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ব্যক্তি ভোটাদের নির্বাচনে আসতে বাঁধা দেয় । বিষয়টি জানতে পেরে আমি ঘটনাস্থলে গেলে কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার উপরে অতর্কিত হামলা চালায় মান্নান-রউফ বাহিনী।
হোসেন আলী জানান, আমি সাধারণ একজন ভোটার। আমার ভোট আমি দিবো।
তবে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে গেলে সরকার দলীয় নেতারা আমাকে বাঁধা প্রদান করে বলে আমার ভোটটি নৌকায় দিতে হবে। নাহলে ভোটকেন্দ্রে আমি ঢুকতে পারবোনা। এসময় তাদের সাথে কথাকাটাকাটির এবপর্যায়ে তারা আমার উপরে হামলা চালায়।
এছাড়া, কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিক মোল্লা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন। সোমবার সকালে ভোট শুরুর আগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। তার প্রতীক ছিল আনারস।
ভোট বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কয়লা ভোট কেন্দ্রে তার এজেন্টরা গেলে তাদেরকে বেপরোয়া ভাবে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। এ খবর পেয়ে তিনি সেখানে গেলে তাকেও নৌকার প্রার্থী ও তার লোকজন মারধর করে। সেখানে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সীল মেরে নেওয়ার অভিযোগও করেন তিনি।