এস,এম,হাবিবুল হাসান :
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় করাত, নিন, বাটালী, হাতুড়ি ইত্যাদি যন্ত্রপাতির ঠক ঠক শব্দের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছে নৌকা তৈরির কারিগররা। বাপ-দাদা হতে প্রাপ্ত এই শিল্পকে আকঁড়ে ধরে হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় শৈল্পিক সৌন্দর্য্যে তৈরি হয় এসব নৌকা। এখানে তৈরি হওয়া নৌকার কদর রয়েছে খুলানা বিভাগ জুড়ে।
নদীমাতৃক এই দেশে এক সময় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হতো নৌকা। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এই শিল্পকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অর্ধশতাধিক লোকের।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটায় সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই নৌকা গড়ার কারখানা। প্রতি বছর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার অন্যতম উপকরণ নৌকা হওয়ার কারনে তালা উপজেলায় সারা বছর নৌকা তৈরির কাজ করতে হয় কারিগরদের।
এছাড়া সাতক্ষীরাসহ খুলনা বিভাগের মৎস্যঘের ব্যাবসায়ীরা ক্রয় করেন এই নৌকা। তবে আধুনিক প্রযুক্তির বিশ্বে নৌকা তৈরি করতে এখনো লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া।
নৌকার তৈরীর কারিগররা সাধারণত ডিঙ্গি ও কোষা ২ ধরনের নৌকা তৈরি করে থাকেন। কোষা ৯-১০ফুট আর ডিঙি নৌকা ১৫-১৬ ফুট দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে। কাঠসহ প্রয়োজনীয় মালামাল প্রস্তুত থাকলে দৈনিক ২টি থেকে ৩ টি নৌকা তৈরি করা সম্ভব হয়। তবে এখানে সবচাইতে কোষা নৌকার কদর বেশি রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা । কিন্তু অতিতের থেকে বর্তমানে নদ-নদীর সংখ্যা কম ও নৌ পথে চলাচলের মধ্যে সীমাবদ্ধতার কারনে ব্যাবসায় চলছে মন্দা। মুনাফার পরিমাণ কম হলেও ধরে রেখেছে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত এই শিল্প।
সাধারণত নৌকা তৈরিতে খৈ, কড়ুই ও চম্বল, সুন্দরী গাছের কাঠ, ধাতু দ্রব্য পেরেক, তারকাঁটা, জলুয়া ব্যাবহার হয়ে থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেহগনি গাছের কাঠ ব্যাবহার করে থাকেন করিগররা। একটি ১২ হাত লম্বা একটি নৌকা তৈরি করতে তিন জন শ্রমিকের মুজুরী প্রায় ২২-২৫শ’ টাকা। এবং কাঠ বাবদ খরচ হয় চার হাজার টাকা,নানা বিধি আনুষঙ্গিক উপকরণ বাদে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। নয় থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে একটা নৌকা বিক্রি হয় ১২-১৪ হাজার টাকা।
মো. রফিকুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন নামের কয়েকজন কারিগর জানান, প্রতিদিন সকল খরচ মিটিয়ে সামান্য কিছু টাকা লাভ হয় আমাদের। তারপরেও এই শিল্পকে আমরা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।

যশোর ঝিকরগাছা হতে নৌকা ক্রয় করতে আসা অরুন সরকার জানান, তিনি ১২ হাত লম্বা একটি নৌকা ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। তার মৎস্য ঘেরে মাছের খাদ্য দেওয়া ও শেওলা পরিষ্কার করার জন্য এই নৌকা ব্যবহার করা হবে। যশোরের অধিকাংশ মানুষ এখান থেকে নৌকা ক্রয় করেন।
পাটকেলঘাটা নৌকা তৈরির কারখানা মালিক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তার বাবা এই নৌ-শিল্পের কাজ শুরু করেন। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত এই কারখানাটি তিনি ধরে রেখেছেন। বারো মাস নৌকা তৈরি করা হয়।তার কারখানায় মোট ১২জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিন ৪-৫ টা করে নৌকা তৈরী করা সম্ভব হয়। তবে নৌকা তৈরীর সরঞ্জামের দাম উর্দ্ধগতির কারণে লাভ একটু কম হয়।
আরেক নৌকা তৈরির কারখানা মালিক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তার কারখানায় বর্তমানে কাজ করেন ১৫ জন শ্রমিক। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে এই নৌ-শিল্পকে ধরে রেখেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে নৌ- যোগাযোগ ব্যাবস্থা না থাকায়, নৌকার চাহিদা অনেক কম। এখন এই নৌ-শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই।