এস,এম,হাবিবুল হাসান :
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সড়কের বেহাল দশা। সড়কের কোথাও কোথাও খানাখন্দে ভরা, তারউপর বৃষ্টিতে পানি জমে আরও বেহাল হয়ে পড়েছে। ছাল-চামড়া উঠে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দে পরিণত হয়েছে সড়কটি। স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তাটির পীচ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্ত ছাড়াও রাস্তার দুধার অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় বসে গিয়ে রাস্তার মধ্যভাগ উচু হয়ে গেছে। বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক ও খালি ট্রাক চলাচল করতে ব্যপক দুর্ভোগ পোহাতচ্ছে চালকরা। ফলে ভারত থেকে আসা পন্যবাহী ট্রাকগুলো প্রতিনিয়ত পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
ভোমরা স্থলবন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩শ-৫শ মালবাহীট্রাক আসাযাওয়া করে ভারত থেকে। বন্দরটি থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে সরকার। বন্দরের রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় দীর্ঘদিন যাবত। এভাবে থাকলেও এটা নিয়ে যেন কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। রাস্তাটি এতই খারাব যে ট্রাক তো দুরের কথা সাধারণ মানুষও চলাচল করতে পারে না।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কে বারবার বলার পরও তারা কর্ণপাত করছে না। রাস্তাটি এ অবস্থায় বেশিদিন থাকলে বন্দরে আমদানি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই এটি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ অফিস সুত্রে জানা যায় ,সাতক্ষীরা সদরের আলীপুর থেকে ৬ কিলোমিটার পিচের রাস্তার জন্য ব্যয় ধরা হয় ২১ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং ভোমরা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের জন্য ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৪৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। দুই ধাপেরই কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাইটেক কনস্ট্রাকশন। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর, কাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী ২০ সেপ্টেম্বর। তবে এখন পর্যন্ত কাজই শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ কর্মচারী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল আলম মিলন বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ভঙ্গুর অবস্থায় থাকায় আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঠিকাদার এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগ একটু নজর দিলে দ্রুত এটির সমাধান হতো।
এ সম্পর্কে হাইটেক কনস্ট্রাকশনের প্রকৌশলী কাজী কাশেদুল হক জানান, করোনা, বিধিনিষেধ ও ভারত থেকে পাথর আনতে না পারায় সড়কের সাড়ে ছয় কিলোমিটারের কাজ যথাসময়ে শুরু করা যায়নি। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। আর সড়কের তিন কিলোমিটার অংশ ঢালাই হবে, এ জন্য নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন নকশা না পাওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারছেন না তাঁরা।
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আসে ভারত থেকে। বাংলাদেশ থেকেও পণ্যবাহী গাড়ি যায় আরও প্রায় দুশো। সড়ক দিয়ে দিনে ৭শ’-৮শ’ ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়ি চলাচল করে। ভোমরা স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার এতই খারাপ যে ট্রাক তো দূরের কথা, মানুষও চলাচল করতে পারে না। সড়কের ছাল–চামড়া উঠে খোয়া বেরিয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সাতক্ষীরা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজামউদ্দীন আহমেদ বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর থেকে তিন কিলোমিটার সড়ক ঢালাই হবে। নকশা পরিবর্তনের বিষয়টি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে রয়েছে। নকশা পরিবর্তন হয়ে না এলে কাজ শুরু করতে পারছেন না ঠিকাদার। বাকি ছয় কিলোমিটার সড়ক হবে পিচের। আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
