এস,এম,হাবিবুল হাসান:
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের দুটি সংগঠনের নির্বাচনের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বন্দরের শ্রমিকরা। ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা- ১১৫৫ ও রেজি: নং-খুলনা-১১৫৯ কমিটির নেতা কর্মিরা এ কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
মঙ্গলবার(০৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা- ১১৫৫ ও রেজি: নং-খুলনা-১১৫৯ কমিটির নেতা কর্মিরা কর্মবিরতি ও স্থলবন্দরের সড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করে।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ১১৫৯ এর সহ-সভাপতি মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাধারণ শ্রমিক ইউনিয়ন- খুলনা- ১১৫৯ এর সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম, শ্রমিক ইউনিয়ন ১১৫৫ এর সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম, শ্রমিক নেতা মো. মনিরুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম খোকন, ইবাদুল হক প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, শ্রমিকদের একটি পক্ষ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এক জনপ্রতিনিধির সহয়তায় গোপনে অবৈধভাবে শ্রম অধিদপ্তর থেকে নতুন একটি কমিটি করে এনেছে। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকরা এই কমিটি মানতে নারাজ। শ্রমিকরা চাচ্ছে সাধারণ সভার মাধ্যমে তপশিল ঘোষণা করে নিরপেক্ষ নির্বাচন।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা নিবার্চন করে বর্তমানে কমিটিতে আছি। করোনা পরিস্থিতির কারনে আমরা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে পারিনি। আমরা এখন শুনছি গতবার যারা নির্বাচনে ফেল করেছিলো তারা গোপনে কমিটি করেছে। তারা জোর করে ক্ষমতায় আসতে চাইছে। এটা শুনার পর সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা কাজ বন্ধ করে সাধারণ সভা ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করছে।
উল্লেখ্য যে, গোপনে ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের দুটি ইউনিয়নের কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে কোটি টাকার বাণিজ্য। সব পক্ষই ধর্ণা দিচ্ছে মহাজনের কাছে। টিকে থাকতে কোটি টাকা দর উঠেছে। কিন্তু তাতে মন গলছে না তাদের।
আরও বেশি দর উঠার অপেক্ষায় দেনদরবার চলছে প্রতিনিয়ত। এরমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভোমরার হ্যান্ডিলিং শ্রমিকরা। সাধারণ সভা ও নির্বাচনের দাবীতে তারা মাঠে নেমেছেন। তবে অপর পক্ষ কোটির বেশি দাম দিয়ে রাতারাতি একটি কমিটি তৈরী করে তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যেকোন মুহূর্তে তারা ইউনিয়ন দখল করতে পারে এমন খবরে উত্তেজনার সৃষ্ঠি হয়েছে ভোমরা স্থলবন্দর দুটি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে।
ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা- ১১৫৫ এবং রেজি: নং-খুলনা-১১৫৯ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে লকডাউনের মধ্যে।বিশ্বব্যাপি মহামারি করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করতে চাই বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ। কিন্তু শ্রমিকদের নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই তাদেরকে মহাজনের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন। মহাজনের অনুমতি ছাড়া তারা সাধারণ সভা বা নির্বাচনের অনুমতি দিতে পারবেন না বলে ছাপ জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোমরা স্থল বন্দরের একাধিক সূত্র জানান, ইতোমধ্যেই দর উঠাউঠি শুরু হয়েছে। বর্তমানদের পক্ষ থেকে একটি গ্রুপ কোটি টাকা দর তুললেও তা ধোপে টিকছে না। যদিও বর্তমান নেতৃত্বের অধিকাংশই সরকার দলীয় নেতা কর্মী সমর্থক। তবে, মাঠে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। তারা যেকোন সময় ইউনিয়ন দখল করে নিতে পারেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এদের অধিকাংশই ২০১৩ সালে জামাত নেতা সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে গোটা সাতক্ষীরাসহ ভোমরায় নাশকতার নেতৃত্ব প্রদান করেন। জনৈক রেজাউল করিম, আনারুল ইসলাম, হারুণ গাজী, মোশারফ হোসেন, আমজাদ হোসেন এই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা-১১৫৫ এর সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যারা বর্তমান কমিটিতে আছে তাদের বাদ দিয়ে গোপনে অবৈধভাবে নতুন কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা এই কমিটি মানতে চাচ্ছে না। শ্রমিকরা চাচ্ছে সাধারণ সভার মাধ্যমে তপশিল ঘোষণা করে নিরপেক্ষ নির্বাচন।
ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা-১১৫৯ এর সভাপতি এরশাদ আলী বলেন, আমরা নিবার্চন করে বর্তমানে কমিটিতে আছি। করোনা পরিস্থিতির কারনে আমরা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে পারিনি। আমরা এখন শুনছি গতবার যারা নির্বাচনে ফেল করেছিলো তারা গোপনে কমিটি করেছে। এটা শুনার পর সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা কাজ বন্ধ করে সাধারণ সভা ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের দাবিতে এই কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ সমাবেশে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে, অভিযুক্ত আনারুল ইসলাম বলেন, ভোমরা হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নে কোন সমস্যা নেই। ইউনিয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোমরার একজন ব্যবসায়ী জানান, পূর্বের একটি কমিটি ৫০ লাখে দফারফা হয়েছিল। আপনারা কোটি টাকা লিখে দিলেন, আর তাতেই রাতারাতি দাম বেড়ে দেড় কোটিতে দাড়ালো। একজনই নিলেন এক কোটি ২০ লাখ। তার সাথে সেতু বন্ধন স্থাপনে একটি প্রাইভেটকার। আর একজন ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া খুচরা পাটিদের দিতে হয়েছে আরো প্রায় ২৫ লাখ টাকা।