শুক্রবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ সকাল ১০ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম, শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম, শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রা উপজেলা যুব ফোরাম, ইয়থ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর আয়োজনে বিশ্ব জলবায়ু অবরোধ কর্মসূচী ২০২১ উদযাপন করা হয়।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের সামনে বিশ্ব জলবায়ু অবরোধ কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন আশাশুনি উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ আব্দুল হান্নান, প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ আহসান হাবীব, রিপোর্টার্স ক্লাবের সম্পাদক জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ বাচ্চু, মোঃ সেকেন্দার আলী ও লিডার্স এর প্রোগ্রাম এস. এম. মনোয়ার হোসেন সভাপতি বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে অন্যায় আচরণ করছি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আমাদের খাল বিল ভরাট হয়ে অতিবৃষ্টির কারণে ফসলি জমি মাছের ঘের রাস্তাঘাট পানির নিচে ডুবে গেছে। আপনারা দেখেছেন প্রতিবছর বেড়িবাঁধ ভেঙে যেয়ে আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমাদের বাঁচার তাগিদে আমাদেরকে এক হয়ে এই আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে হবে। সকলকে দল-মত নির্বিশেষে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।”
শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সামনে বিশ্ব জলবায়ু অবরোধ কর্মসূচী ২০২১ উদযাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্যামনগর উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার নজরুল ইসলাম, উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সদস্য ও সহকারী অধ্যাপক মানবেন্দ্র দেবনাথ, লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল, ফোরামের সদস্য, সাংবাদিক ও শিক্ষক রনজিৎ বর্মন, সাংবাদিক এম কামরুজ্জামান, সাংবাদিক আবু সাঈদ, সাংবাদিক বেলাল হোসেন, উপজেলা যুব ফোরামের সভাপতি মোমিনুর রহমান ও জেলা স্বর্ন কিশোরী ঐশ্বর্য্য কর্মকার প্রমুখ।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতি বলেন, “আমরা উপকূলে বাস করি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে আমরা নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। আজ যদি আমরা সচেতন না হই এবং আমরা আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা ভয়াবহ বিপদের মধ্যে পড়ব।
এজন্য সকলকে এই আন্দোলনের সাথে একাত্বতা,ঘোষণা করার আহবান জানাচ্ছি।” কয়রা প্রেস ক্লাবের সামনে বিশ্ব জলাবয়ু অবরোধে কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন কয়রা উপজেলা জলবায়ু,অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি মোঃ শাহবাজ আলী, আরও উপস্থিত ছিলেন হুমায়ন কবির, প্রেসক্লাবের সভাপতি হারুন অর রসিদ, পারুল আক্তার ও যুবদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাকিব হালদার।
সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা কয়রা উপকূল বাসী দূর্যোগ হলেই আমাদের পানিতে ঘরবাড়ি সহ সকল সম্পদের ক্ষতি সহ বহু জীবনহানী ঘটে। জলাবদ্ধতার কারণে ধান মারা যাচ্ছে ও কোটি টাকা মৎস্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
লবণ পানির অনুপ্রবেশের কারণে মানুষ কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছ ও অকালে মারা যাচ্ছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যাচ্ছে।
এই সকল ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব জলবায়ু পরিষদের নেতাদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।”ফুলতলা মোড়ে বিশ্ব জলবায়ু অবরোধ কর্মসূচি পালন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি শেখ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও লিডার্স এর শম্পা বিশ্বাসের পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাস বাচ্চু, কালীগঞ্জ উপজেলা

জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ শাহা জালাল, যুব ফোরামের শেখ হারুন, সাংবাদিক এস এম আহমাদুল্লাহ বাচ্চু, শেখ মোদাচ্ছের হোসেন জান্টু, শেখ আতিবুর রহমান , কবি আলী সোহরাব , শেখ আল নূর আহমেদ ইমন,প্রমুখ l
বক্তারা বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারন হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তন কে প্রধানত দায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ হলো বায়ুমন্ডলে তাপ বৃদ্ধিকারী ক্ষতিকর গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াl অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি খড়া বন্যা ঘূর্ণিঝড় সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সংঘটিত হচ্ছে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে l পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে।
এ ইক্ষতির হাতে থেকে রক্ষা পেতে তারা দশ দফা দাবী পেশ করেন।
১. দক্ষিণ পশ্চিম উপকূল অঞ্চল কে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করতে হবে
২. উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে
৩. জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে
৪. জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার সহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে
৫. ভেরিবাদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরী তহবিল গঠন ভেরিবাদ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকার
৬. উপকূলীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে
৭. আমাকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া
৮. দূর্যোগপ্রবণ দক্ষিণ- পশ্চিম উপকূল চর ও দীপ অঞ্চল বাসির জানমাল রক্ষায় কার্যকর
৯. ঝড়-ঝঞ্ঝা নদী ভাঙ্গন ও ভূমিক্ষয় ঠেকাতে উপকূল দ্বীপ চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ
১০. সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট দিবস উপলক্ষে সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, লিডার্স, কোস্টাল ইয়ুথ অ্যাকশন হাব, বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট, ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ, ভিবিডি-সাতক্ষীরা, সামাজিক ও রক্তদান সেবায় আমরা সহ জেলার বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্মিলিতভাবে এই কর্মসূচি পালন করে।
আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬) এবং যুব সম্মেলনকে সামনে রেখে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে উন্নত দেশগুলোকে চাপে রাখতে কর্মসূচিতে অংশ নেন জলবায়ু কর্মীরা।
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন, পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ও জলবায়ু নায্যতার দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন তারা। এ সময় প্রতীকী ফাঁসিতে ঝুলে জলবায়ু-সংকটকে তুলে ধরেন ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের শাহিন সিরাজ।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর সাতক্ষীরা ইউনিটের সমন্বয়ক এসএম শাহিন আলমের সভাপতিত্বে ও শেখ শাকিল হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দৈনিক দক্ষিণের মশালের সম্পাদক আশেক-ই-এলাহী, জেলা জলবায়ু ফধিপরামর্শ ফোরামের সদস্য সচিব ও স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, ফোরামের সদস্য ও সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহিম, ভিবিডি সাতক্ষীরার সভাপতি সুব্রত হালদার, তামান্না তানজিম প্রমুখ।
খুলনার পিকচার প্যালেস মোড়ে লিডার্স ও খুলনা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের আয়োজনে জলবায়ুর প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশ্ব জলবায়ু অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়। উক্ত কর্মসূচিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সনাক খুলনার সভাপতি ও খুলনা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শিলু, সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জনউদ্যোগের সমন্বয়ক মহেন্দ্র নাথ সেন।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি ও ফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা, বেলা খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, ছায়া বৃক্ষের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বাদশা সহ ইয়ত নেট এর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে
বক্তব্য রাখেন ছায়াবৃক্ষের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বাদশা, নারী নেত্রী চিশতী মুস্তারী বানু,
পরিবর্তন-খুলনার সমন্বয়কারী শিরিন পারভীন, খুলনা লায়ন্স ক্লাবের মুক্তা জামান, ক্লাইমেট জাষ্টিস-খুলনার প্রতিনিধি রিয়াজ আফরিন, ইয়োথ নেটের সৌমেন্দ্র দেবনাথ, সম্পা সরকার, আবিদ হায়দার প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলে, “জলবায়ুর প্রতি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ২০১৮ সালে সুইডেনের একজন স্কুল ছাত্রী প্রথম অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যা পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলনে বিশেষ আলোচনায় আসে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে একযোগে ১২২টি দেশে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় তার পর থেকে প্রতিবছর জলবায়ুর ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের বিষয়টি বিবেচনা করে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে বক্তারা আরো বলেন, আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দূর্যোগের শিকার।
প্রতিবছর এলাকার জনগোষ্ঠী পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। সুপেয় পানির অভাবে আর কর্মহীন হয়ে
মানবেতর জীবন যাপন করছে। বছরের পর বছর শুধু আশ্বাস শুনে আসছে। মাঠ পর্যায়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনবার কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
এই অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠী ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। বক্তারা তাদের বক্তব্যে জলবাযু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানান।”
বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে বিশ্ব জলবায়ু অবরোধ কর্মসূচী ২০২১ উদযাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সহ-সভাপতি ও প্রাক্তন শিক্ষক ব্যানার্জী রবীন্দ্র নাথ, আরও উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সদস্য ও সাংবাদিক ইসারাত জাহান, সাংবাদিক আজাদুল হক প্রমূখ সভাপতি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে দায়ী উন্নত দেশগুলো কিন্তু ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে গরিব দেশগুলো। এই ভাবে যদি দূর্যোগ বাড়তে থাকে তাহলে ক্ষতির পরিমানও বাড়বে। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্বের নিকট এই দাবী করছি।”