এস,এম,হাবিবুল হাসান :সাতক্ষীরার সাবেক শ্রমিক নেতা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বৃদ্ধ বজলুর রহমান অভিমান ভেঙ্গে অবশেষে নিজ বাড়িতেই ফিরলেন। ছেলের নির্যাতনে স্বীকার হয়ে নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত বাবা বজলুর রহমান ভিক্ষার ঝুলি ফেলে দিয়ে এখন থেকে তার ছেলের পরিবারেই স্ত্রীসহ থাকবেন। তাদের ভরণপোষণ ও দেখভালের সব দায়িত্ব নিয়েছেন তারই ছোট ছেলে আব্দুস সালাম বাবু।
রবিবার(০৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে এক আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান এবং সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই অপর্না রায়কে সাথে নিয়ে বৃদ্ধ বজলুর রহমানকে তার নিজ ঘরে তুলে দেন। এসময় তার বড় ছেলে সাবেক সেনা সদস্য আবুল কালাম ও প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির নিজ জমি ও বাড়ি থেকে বিতাড়িত বজলুর রহমানকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে তার হাতে নগদ অর্থ এবং খাদ্য সহায়তা তুলে দেন।
তিনি সদর ইউএনও এবং পুলিশকে বজলুর রহমানকে তার বাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
অপরদিকে, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম বৃদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমানকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে টেলিফোন করেন।
গতকাল শনিবার(০৪ সেপ্টেম্বর)জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণ এবং আজ রবিবার প্রিন্ট সংস্করণে ‘ভিক্ষার ঝুলি হাতে আওয়ামী লীগ নেতা’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরের প্রতি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।
এখবর দেখে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলমকে টেলিফোন করে তাকে সহায়তা দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। একই সাথে প্রতিমন্ত্রী জেলা প্রশাসককেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
উল্লেখ্য যে, বজলুর রহমান সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক নেতা। তিনি আজীবন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দুই ছেলে সাবেক সেনাসদস্য আবুল কালাম এবং ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বাবু ও মেয়ে নিলুফার ইয়াসমিনের বাবা বজলুর রহমানের ৬ শতক জমির ওপর মাগুরা মিলবাজার এলাকায় একটি পাকা দালানবাড়ি রয়েছে। তার ছোট ছেলে আব্দুস সালাম বাবু তার কাছ থেকে ওই জমি ও বাড়ি লিখে নিয়ে বজলুর রহমান ও তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনকে কিছুদিন আগে বাড়ি থেকে নির্যাতনের মুখে তাড়িয়ে দেন।
এ ঘটনার পর থেকে অসহায় হয়ে পড়া বজলুর রহমানের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বড় ছেলের সংসারে থাকলেও তিনি নিজে অন্যের বাড়িতে থাকেন। প্রতিদিন সকালে পাড়ায় পাড়ায় ও বাজারে যেয়ে ভিক্ষা করে যা পান তাই দিয়ে তার ভরণপোষণ চলছিল। শেষ বয়সে পারিবারিকভাবে বঞ্চনার শিকার একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিবেদিত রাজনৈতিক কর্মীর এমন দুর্দশা দেখে দৈনিক যুগান্তরে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে সব মহলে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়।
রবিবার আনন্দঘন পরিবেশে নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে বজলুর রহমান বলেন, দৈনিক যুগান্তরের এই রিপোর্টের কারণে আমার সমস্যার সমাধান হলো। তিনি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক, জেলা প্রশাসক এবং সদর ইউএনওকে ধন্যবাদ জানান।
এসময় তার ছোট ছেলে আব্দুস সালাম বাবু বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমি এখন থেকে বাবা ও মায়ের ভরণপোষণের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছি। বৃদ্ধ বজলুর রহমান ভিক্ষার ঝুলি ফেলে তার নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।