এস,এম,হাবিবুল হাসান : সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গলা খালি গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গন এলাকার মানুষের জীবনে প্রায় প্রতিবছরই অভিশাপ বয়ে আনে।
শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম উদাসীনতার কারণে মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ তাদের জীবনে ভয়ঙ্কর দুর্যোগ সৃষ্টি করে। নদীর পার্শ্ববর্তী বেড়িবাঁধ কেটে নোনা পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করে এক শ্রেণীর অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা। ফলে বর্ষা মৌসুম এলেই নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় । নদী ভাঙ্গনের কবলে এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে । সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই বললে চলে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে হরিচরণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় অপরিকল্পিত ভাবে বেড়িবাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ করা যাবে না বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস লোনাপানি বৈরী আবহাওয়ায়, অতি মাত্রায় লবণাক্ততার কারনে ফসল-ফলাদি, শাকসবজির চাষ ঠিকমতো হয়না এই এলাকায়। সুপেয় পানি অভাব ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এলাকার মানুষ। এর প্রভাব পড়ছে শিশুদের উপর। মানুষের বসবাসের জন্য একেবারেই অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে ভাঙ্গন এলাকার মানুষের জীবনমান ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস,নদী ভাঙ্গন কবলিত শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জের গলা খালির মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করে বেঁচে আছে। জীবিকা অন্বেষণের একমাত্র উপায় হিসেবে নদী থেকে মৎস্য আহরণ করায় তাদের মুল লক্ষ্য । তার উপর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি বেড়ে যাওয়ায় তারা ঠিকমত মৎস্য আহরণ করতে পারছে না।
প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় বন্যা জলোচ্ছ্বাস এলে প্রশাসনের নির্দেশনায় নৌকা যোগে সাইক্লোন সেল্টার বা অন্যান্য স্থানে স্থানান্তর করা হয়। তারা তাদের পরিবার পরিজন গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।এলাকায় মানুষের দাবি একটি উন্নত সাইক্লোন সেন্টার ও টেকসই বেড়িবাঁধ করার।
শ্যামনগরের গলা খালি গ্রামের আব্দুর রউফের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ঝড় তুফান হলে নৌকায় করে বউ-বাচ্চা, পরিবার-পরিজন, গরু-ছাগল হাঁস-মুরগি পারাপারে আমাদের ব্যাপক অসুবিধা হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয়।
এ বিষয়ে গত শনিবার (২ অক্টোবর) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ সুন্দরবন সংলগ্ন রমজান নগর ইউনিয়নের গলা খালি গ্রামে সরোজমিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে চিহ্নিত করে দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্যরা পরিদর্শনে যান।
এসময় ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় এলাকার মানুষের জীবন যাপন বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়।

পরে,সদস্যরা জলবায়ূ পরিবর্তন জনিত দুর্যোগ প্রবণ এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এসে অভিজ্ঞতা নিয়ে মতবিনিময় করেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্যরা। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়’র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশে’র আহবায়ক ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ’র সদস্য ও মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, সংসদ সদস্য রূমানা আলি,
সাতক্ষীরা সদর-০২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, কুষি সম্পাসারণ অধিদপ্তর খামাবাড়ি সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবেরে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন প্রমুখ।