মোঃ সাইফুল ইসলাম,ধামরাই(ঢাকা) প্রতিনিধি:
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বালিয়া জমিদার বাড়ি স্থাপত্যকৌশলের একটি অন্যতম নিদর্শন।

প্রায় চারশ’ বছরের পুরাতন জমিদার বাড়িটি ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ঢাকার ধামরাইয়েরের বালিয়া গ্রামের এই পুরাতন বাড়িটি এই অঞ্চলের লোকজনদের কাছে বালিয়া জমিদার বাড়ি বা বালিয়া প্রাসাদ নামে পরিচিত। এই জমিদার বাড়ি বা প্রাসাদকে এক সময়ে এই অঞ্চলের মর্যাদার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো। এই জমিদার বাড়ির মালিক ছিলেন একজন মুসলিম।
বালিয়া গ্রামের প্রবীণ লোকদের কাছ থেকে জানা যায় এই জমিদার বাড়িটির বয়স প্রায় ৪০০ বছরের বেশি। এখনো পর্যন্ত এই জমিদার বাড়িটি সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য জানা যায়নি, তবে কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায় এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার মালিক মোহাম্মদ বক্স, যিনি এসেছিলেন পাকিস্তানের মুলতান থেকে এই বালিয়া গ্রামে এসে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । মালিক মোহাম্মদ বক্স এর মৃত্যুর পর তার সন্তান হাজী মালিক করিম বক্স জমিদার হিসেবে সফল ছিলেন, তিনি কাশ্মির এবং কায়েদ-ই-আযম রিলিফ ফান্ডের বেশ বড় অংকের টাকা দান করে সুখ্যাতি পেয়েছিলেন এক সময়ে।
অন্যান্য জমিদার বাড়ির সাথে এই জমিদার বাড়ির কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় বাংলাদেশের যে সকল জমিদারি স্টেটগুলোর মুসলিম জমিদারদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ছিল তাদের মধ্যে বালিয়া জমিদার বাড়ি ছিল অন্যতম, এই জমিদার বাড়িটি মুসলিম জমিদারদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে বাড়িটির গঠনরীতিতে এসছে বৈচিত্র্য। বাড়ির ছাদে লক্ষ্য করা যায় একটি উচু গম্বুজ এবং এিভুজ আকৃতির একটি পেডিমেন্ট আর স্তম্ভ যুক্ত বাড়ির মূল প্রবেশপথটি অতীত ঐশ্বর্যের কিছুটা সাক্ষ্য দেয়। যা সচরাচর অন্যান্য জমিদার বাড়িতে দেখা যায় না।
বাংলার প্রাচীনতম ইতিহাসের সাক্ষী এই জমিদার বাড়িটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিল্ডিংটির বেশিরভাগ সামগ্রী সরিয়ে ফেলা হয়েছে। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে দেয়াল খসে পড়ছে, পরিচর্যার অভাবে দেয়ালে গজিয়েছে লতা পাতার জঙ্গল। জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে একটা তিন গম্বুজ মসজিদ, যেটা পরবর্তী সময়ে বানানো হয়েছিল বলেই মনে হয়, কিংবা বারবার সংস্কারের কারণে আদি চেহারা হয়তো বা বদলে গেছে।
স্থানীয় প্রবীণদের কাছে জানা যায়, এই মসজিদটি প্রাচীন আমলে জমিদারের বংশধারা ইবাদত বন্দেগী করেছেন এখন সেখানে নামাজ আদায় করেন এলাকার মুসল্লিগন। এতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে এক রক্তাক্ত ইতিহাস ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীরা এই মসজিদটি দখলে নেয়, পরে মুক্তি বাহিনীর সাথে ব্যাপক গুলাগুলি হয় পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মুক্তি বাহিনীরা আনন্দ উদযাপন করে বলে কথিত রয়েছে।
বালিয়া জমিদার বাড়ির বংশধর বালিয়া গ্রামের মোঃ জুগলু মিয়া বলেন, আমরা তখন ছোট ছিলাম দেশে যখন যুদ্ধ আরম্ভ হলো ডিসেম্বর মাসে আমাদের এখানে ১০/১৫ জন পাকিস্তানি আর্মি আসে, আসার পরে মুক্তিযোদ্ধারা এখানে এসে গুলাগুলি করে এবং তিন জন পাকবাহিনী মারা যায় ।
স্থানীয়দের দাবি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই জমিদার বাড়িটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচালনা করা হোক। যাতে করে শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য কালের পরিক্রমায় হারিয়ে না যায়।